Sunday, July 1, 2012

ইতিহাস গড়লো স্পেন


কিয়েভ: অনিন্দ সুন্দর ফুটবল। ছবির মতো পাস। গোলগুলো হৃদয় স্পর্শী। খেলার বর্ণনা ভাষায় প্রকাশের নয়। অন্তর দিয়ে উপলব্ধির। ভয়ঙ্কর সুন্দর ফুটবল খেলেছে স্পেন।
স্পেন: ৪ (ডেভিড সিলভা ১৪ মি. জরদি আলবা ৪১ মি, ফার্নান্দো তোরেস ৮৪ মি. ও জুয়ান মাতা ৮৮ মি. ), ইতালি: ০
ইউরো, বিশ্বকাপ, ইউরো! চোকার, জোকার থেকে বিজয়ী। টানা তিনটি বড় আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। অনেক আগে থেকে ছোট ছোট পাসে ছন্দময় ফুটবল খেলে দলটি। দেল বস্কের টিকি-টাকায় তাতে শোভা বেড়েছে। গতি এসেছে খেলায়।

ছোট ছোট পাসে, ছন্দের তালে তালে এগিয়েছে প্রথম থেকে। বলের দখল রেখেছে খেলার সিংহভাগ সময়। ইতালির মতো ফুটবল পরাশক্তিকে পাড়ার দল বানিয়ে ফাইনাল জিতেছে ৪-০ গোলে। ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে স্পেনের সাফল্যের দিনলিপি।
১৯৬৪ সালে প্রথমবার ইউরোপের সেরা হয় স্পেন। অনেক অনেক বছর পরে দ্বিতীয় শিরোপা জেতে ২০০৮ সালে। দুঃসময়ের দিনগুলোতে তাদেরকে নিয়ে কত গল্প ফেদেছে মানুষ। এখন সেই দলের প্রসংসায় পঞ্চমুখ দর্শক, সমর্থক, ফুটবল অনুরাগীরা। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের মতো স্পেনেরও বিশ্বজুড়ে সমর্থন বাড়ছে।
ওহ ইতিহাসের হতাশা তাদেরকে গ্রাস করতে পারেনি। জার্মানদের মতো ভেঙ্গে পড়েনি স্প্যানিশরা। অতীতকে পেছনে ফেলে ইতালিকে হারিয়েছে। বড় আসরে আগের সাতবারের দেখায় ইতালিকে হারাতে পারেনি স্পেন। কিন্তু এবার সুদে-আসলে সব বুঝিয়ে দিয়েছেন সিলভা, আলবা, তোরেস ও জুয়ান।
ফাইনালের আগে কত জল্পনা কল্পনা। স্পেন সব উড়িয়ে দিয়েছে এক তুড়িতে। যাদের সঙ্গে গ্রুপ পর্বের খেলায় পয়েন্ট হারিয়ে ছিলো স্পেন, সেই ইতালিকে ফাইনালে পাত্তাই দেয়নি। রক্ষণাত্মক খেলার জন্য বিখ্যাত ইতালির ডিফেন্স ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছেন সেস ফ্যাব্রিগাসরা।
সেমিফাইনাল পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ইতালি গোল খেয়েছে দুটি। তাদের শক্তিশালী রক্ষণভাগের সে সুনামকে চুরমার করে দিয়ে স্পেন ফাইনালে এক হালি গোল দিয়েছে। বুফনের কোন জারিজুরি টেকেনি লাল বাহিনীর আক্রমণ পরিকল্পনার সামনে।
প্রথমার্ধে এতটা ভালো ফুটবল খেলেছে স্পেন বুফন তাদের কৌশল ধরতে পরেননি। ইতালি তার রক্ষণভাগ সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বিচ্ছুর মতো ফাঁকফোকর দিয়ে বল নিয়ে বিপদ সীমায় ঢুকেছেন ফ্যাব্রিগাসরা। তারপরেও গোল বের করতে ১৪ মিনিট লেগেছে স্পেনের। ডেভিড সিলভা হেডে দর্শনীয় গোল করেন। আন্দ্রে ইনিয়েস্তার কাছ থেকে বল পেয়ে সেস ফ্যাব্রিগাস ডিফেন্ডার জর্জিও সিলিনিকে কাটিয়ে ব্যাক-লাইন থেকে ক্রস করেন। ডেভিড শক্তি দিয়ে হেড নেন। গায়ে গায়ে লেগে থেকেও শেষরক্ষা করতে পারেননি ইতালির ডিফেন্ডাররা।
ওপর থেকে নিচে অসাধারণ ফুটবল খেলে ইতালির খেলোয়াড়দের কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে দেয়নি স্পেন। প্রতিআক্রমণ থেকে ৪১ মিনিটে দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেয়। আলবা বল পেয়ে পাস দেন জাভিকে। ফিরতি পাসে বল নিয়ে গোলরক্ষক বুফনকে প্লেসিং শটে ফাকি দেন তিনি।
পরের অর্ধের শুরুতে খুব চাপিয়ে খেলে ইতালি। স্পেন তাদেরকে বেশিক্ষণ বল চাপাতে দেয়নি। পাল্টা আক্রমণ থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করেছে। দেল বস্ক বসে বসে খেলা দেখছিলেন। ইতালির কোচ সিজারে প্রানদেল্লি তখন গলা ফাটাচ্ছিলেন ডাগআউটের সামনে দাঁড়িয়ে। পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে ডাগআউটের সামনে ফিরে আসতে আসতে আরেক গোলে পিছিয়ে পড়ে প্রাণদেল্লির দল। ৮৪ মিনিটে ফার্নান্দো তোরেস গোল করে ইতালিকে খেলা থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেন। জাভি ফাঁকা পেয়ে বল সোজা ঠেলে দেন সামনে। তোরেস বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে বুফনকে বোকা বানান। হতাশায় মুখ চাপা দিয়ে নিজের আসনে ফিরে যান প্রানদেল্লি। দলের পরাজয় নিশ্চিত জেনে আসন ছেড়ে আর উঠলেন না। ৮৮ মিনিটে জুয়ান মাতা ব্যবধান ৪-০ করে দেন। গোলের উৎস ছিলেন তোরেস।
বালোতেল্লি মার্কিংয়ে পড়ে খেলতেই পারেননি। খ্যাপাটে ফরোয়ার্ড ফাইনালে চার গোল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৯০ মিনিটের লড়াই শেষে হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। সেমিফাইনালে ইতালির জয়ের নায়ক সারাক্ষণ বিড়বিড় করে কি যেন বলছিলেন। তা শোনা না গেলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, ঈশ্বরের কাছে গোল প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু ঈশ্বর প্রতিদিন দয়া দেখান না।
শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মিনিটের মধ্যে ইতালির খেলোয়াড়দের দিকে তাকানোর উপায় ছিলো না। কেউ চোখ লাল করে ফেরেছেন, নীল চোখগুলো ধুসর দেখাচ্ছিলো। করুণ দৃষ্টি দিয়ে তার বিজয় উৎসব দেখেছেন।

No comments:

Post a Comment